বঙ্গবন্ধু একটি মেরুদণ্ডহীন জাতিকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে শিখিয়েছিলেন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার সততা, সাহসিকতা, ত্যাগ ও দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যেমে একটি মেরুদণ্ডহীন জাতিকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে শিখিয়েছিলেন। ১৭ই মার্চ বাঙালী জাতির অবিসংবাধিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন বক্তারা।

১৭ই মার্চ বৃহস্পতিবার জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ নুরুন নবী এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান মাহমুদ। সভার শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন আলোচনা সভায় সংযুক্ত নেতৃবৃন্দ। এরপর বঙ্গবন্ধুর "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" থেকে পাঠ করে শুনান যথাক্রমে সংগঠনের সহসভাপতি ফাহিম রেজা নূর, উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, সহসভাপতি ডঃ আবু নাসের রাজীব ও সাংগঠনিক সম্পাদক দস্তগীর জাহাঙ্গীর।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নিজের জীবন সংগ্রামের কাহিনী অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় লেখা "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" পাঠ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সংযুক্ত নেতৃবৃন্দ আবেগাফ্লুত হয়ে মন্ত্রমুগ্ধেরমত শুনেন। যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক ডঃ নুরুন নবী বলেন, "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটি পাঠ করলেই বুঝা যায় বঙ্গবন্ধু জীবনে কত কষ্ট করে, কত ত্যাগ স্বীকার করে রাজনীতি করেছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে দিল্লি তিনি চষে বেড়িয়েছেন। কখনো ট্রেনের ভাড়ার টাকা ছিল না, কখনো অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন ডাক্তার দেখানোর টাকা ছিল না, কখনো দুএকদিন না খেয়ে কাটানো, কখনো ময়লা কাপড় পরে থাকার বর্ণনা আমরা খুঁজে পাই। রাজনীতি করতে গিয়ে কলেজের মায়না দিতে পারেননি, নিজের স্ত্রী ও পরিবার পরিজনকে সময় দিতে পারেননি। ইতিহাসের প্রতি যে বঙ্গবন্ধুর যে গভীর আগ্রহ সেটাও আমরা দেখতে পাই যখন বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক চলার পথে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো পরিদর্শন ও সেগুলোর বর্ণনা করেন। ইতিহাস না জানলে একজন মানুষ সত্যিকারের নেতা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষ, তাদের অধিকার, অতীতের ইতিহাস সবকিছু জেনেই একজন বড় মাপের নেতা হতে পেরেছিলেন। তিনি আরও বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চিত্রকর তাজুল ইমাম বলেন বঙ্গবন্ধুর "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" পাঠ শুনে আমি আবেগাফ্লুত পরছি। কত সহজ সরল অকপট ভাষায় জাতির পিতা রাজনীতি করতে গিয়ে তার কষ্টের দিনগুলোর কথা লিখেছেন। কোন কিছু লুকনানি তিনি লেখনীতে। পাঠ শুনে শুনে আমি একজন ডান পিঠে তরুণ নেতাকে দেখতে পাচ্ছিলাম, যিনি কিনা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন। তার ডাকেই আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম। 'জয় বাংলা' আমাদের কাছে শুধু স্লোগান ছিল না, আমাদের কাছে 'জয় বাংলা' ছিল শক্তি আর সাহস, যুদ্ধের ময়দানে এই 'জয় বাংলা' বলেই গুলি ছুড়তাম। 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু" এই শব্দ গুলোতে এতো শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধীরা শুনলেই পালিয়ে যায়। কিন্তু একথা স্বীকার করতে হবে, আমরা একটা অকৃতজ্ঞ জাতি, আমরা পিতৃ হন্তা, আমরা আমাদের পিতাকে হত্যা করেছি, আমাদের কোন ক্ষমা নেই, এর দায় আমরা এরাতে পারি না। তবুও আমাদের নিষ্ঠুরতার জন্য, আমাদের হীনমন্যতার, আমাদের ঘৃণ্য কৃতকর্মের জন্য জাতির হয়ে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, জিয়াউর রহমান কতৃক একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার ছরছিনার পীর আবু সালেহ-কে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার করার জোর দাবী জানান।
আলোচনায় সভায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, সহসভাপতি যথাক্রমে রাফায়েত চৌধুরী, সফেদা বসু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া ও মুনির হোসেন (অস্ট্রেলিয়া) । সভায় আরও সংযুক্ত ছিলেন উপদেষ্টা ডঃ মিজান আর মিয়া ও অধ্যাপিকা হোসনে আরা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাসরিনা আহমেদ, প্রমুখ।