‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করুন’
Updated: Dec 26, 2020

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার আহবান জানানোর মধ্যদিয়ে এ বছর মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধু এবং বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন: এসব ভাঙচুরের ঘটনা শুধু উপলক্ষ, এই মৌলবাদী শক্তির মুল উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করা।
রোববার অনলাইনে জুমের মাধ্যমে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী এবং সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাংবাদিকতার সহযোগী অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন আরিফ।
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভার প্রধান বক্তা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ড. দেলোয়ার হোসেন আরিফ বলেন: বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু, সেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মত দুঃসাহস দেখিয়েছে এই মৌলবাদীরা। একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণে ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধে জয়ী হলেও বারবার পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর প্রেতাত্মারা আমাদের জাতীয় পতাকাকে খামছে ধরেছে। বাঘ যতীনের মত বিপ্লবীর ভাস্কর্যও তারা ভেঙেছে। এতেই বুঝা যায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও পাকিস্তানের এই প্রেতাত্মারা আজও নির্মূল হয়নি। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এই স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও সংগ্রাম করতে হবে, করতে হবে কঠোর পরিশ্রম।
তিনি বলেন: আমাদের সকলের সজাগ থাকতে হবে, কোনো মসজিদে বা উপসনালয়ে যদি কেউ উগ্র কথা বলে, দেশবিরোধী কথা বলে, তার প্রতিবাদ করতে হবে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, কোনো মসজিদ, মন্দির বা ওয়াজ মাহফিলে কেউ যদি ধর্মীয় কথা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, দেশবিরোধী, বঙ্গবন্ধু বিরোধী কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়।
সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী বলেন: বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক দেশ, সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এই দেশকে স্বাধীন করি। আজকে মৌলবাদীরা দেশে যে স্পর্ধা দেখাচ্ছে, আসলে ভাস্কর্য কোন কিছু না, তাদের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। তাদের সাথে কোন প্রকার আপোষ নয়, এই মৌলবাদীরা রাষ্ট্রদ্রোহি অপরাধ করেছে, তাই তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহি মামলায় গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে এই মৌলবাদীদের থামিয়ে দিতে হবে, তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, কারণ তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন: বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশ কোন মুসলমানের নয়, কোন হিন্দুর নয়, কোন বৌদ্ধের নয়, কোন খ্রিস্টানের নয়, বাংলাদেশ হচ্ছে বাঙালির, যারা বাংলাদেশকে মনে প্রাণে ভালবাসবে বাংলাদেশ তাদের। ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদীরা ভাস্কর্যে আঘাত করে বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট বাংলাদেশকে অস্বীকার করার কথা জানান দিয়েছে এবং এটা করার সাহস পেয়েছে আমাদের অসাবধানতার কারণে, প্রশ্রয়য়ের কারণে এবং অতীতের আপোষের কারণে।এখন সময় এসেছে তাদের উপযুক্ত জবাব দেবার।
বক্তারা মনে করেন: বাংলাদেশে বাংলা, ইংলিশ এবং ধর্মীয় শিক্ষা নীতিতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে সজাগ হবে।
বক্তারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করার দাবিও জানান।
আলোচনার শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা বোনদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিয়ে নির্মিত ‘Mukti – Birth of a Nation’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা পাঠ করেন ডঃ মোহাম্মদ আলী মানিক।
সভায় অন্যনাদের মাঝে বক্তব্য রাখেন শহীদের সন্তান সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর (নিউ ইয়র্ক), বিজ্ঞানী ডঃ আশরাফ আহমেদ (ওয়াশিংটন ডিসি), বীর মুক্তিযোদ্ধা এঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহমান, মূলধারার রাজনীতিবিদ মোরশেদ আলম (নিউ ইয়র্ক), কলামিস্ট শীতাংশু গুহ (নিউ ইয়র্ক), যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা এম এ সালাম (নিউ জার্সি), সহসভাপতি আব্দুর রহিম বাদশা (নিউ ইয়র্ক) ও সাংগঠনিক সম্পাদক দস্তগির জাহাঙ্গীর (ওয়াশিংটন ডিসি), বঙ্গবন্ধু পরিষদ জর্জিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া, ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রানা মাহমুদ, প্রমুখ।
সভা শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী। সভাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া।
News from www.channelionline.com.
This news was also covered in the following news websites and channels:
https://www.bd-pratidin.com/probash-potro/2020/12/20/599300
https://dailydeshkantha.com/post/2481/
https://bornomalanews.com/archives/110470